মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই, ২০১০

ফুলের জন্ম

আমার ফুল হয়ে জন্মাটাই হয়ত সব থেকে বড় ভুল হয়েছে
সত্যি বলছি, মানুষেরা আমার যতটা গুনকীর্তি করে-
আসলে তারা সেটার এক আনাও বিশ্বাস করে না।
জন্মটাই বৃথা, বার বার হতে হয় আমাকে কালের স্বাক্ষী
বলুন, আর কত পারি? মানুষের এত অভিনয় সহ্য করতে!

মানুষের কথা আমাকে একটু বেশীয় ভাবায়
আমাকে নিয়ে যে আহ্লাদে ন্যাকামী তারা করে
আর করে যত মিথ্যা অভিনয়, আর কেউ সেটা করে না।
সহ্যকরাটাই যেন আমার কাজ,শুধু মেনে নিতে হয়-

আমার আগমনটা খুব ক্ষনিকের জন্যই হয় ধরনীতে
সেই যে ভোর বেলাতে সুবাতাস নিয়ে আগমন
সেটাই আমার কাল
সুন্দর মুখশ্রী, আর সুবাতাস এই দুই যম
জন্মলগ্ন থেকেই ওত পেতে থাকে মৃত্যুলগ্নের।
নিত্যদিনের জীবনকাল ক্ষনিকের হলেও
মনুষ্য অভিজ্ঞতা আমাকে করছে নিরাশ;
তারা করে না বিশ্বাস যেটা তারা বলে
কেউ তারা আমাকে নিজের জন্য নেয়না,
আমাকে ব্যবহার করে জন্য তাদের অপূর্নতা ঢাকার।

কোথায় তারা নেয় না আমকে বলতে পারেন?
জন্মদিনের আনন্দ, বাসরের স্বপ্ন জালের বুনন স্বাক্ষী
কিংবা মৃত মানুষের অন্তিম যাত্রা, সব খানেই মানুষ
সঙ্গী করেছে; আমাকে কেন?
তাদের অব্যক্ত ভাষা আমাকে বানিয়েছে।
কত ঘৃনা, ছলনা কিংবা চাতুরী ঢেকেছে
আমাকে ছিটিয়ে, তাদের ইচ্ছামত-
তবু নিজেরা পাল্টেনি সামান্যটুকু
আমার যমেরা আমাকে মৃত্যুর কাছে
সঁপে দিয়ে হয়েছে লাপাত্তা।
আসলে ঐ যম দুটোই আমার জীবন
তাদের প্রস্হানই আমার সমাপ্তি;
প্রস্তুতি নেওয়া নতুন করে ভাষার সম্পূরক হবার।

বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০১০

ফুলের অলি

কত ফুলের অলি হতে মন চেয়েছে
তার ইয়ত্তা কি কেউ রাখে!
কেউ রাখে না, তবে রয়ে যায় কিছু কিছু-
মনের কোঠরে, ওলিকে তাড়া করে পিছু পিছু।

সেই যে শুরু সেই ছোট্টটি থেকে
তখন শুধু লাগত ভালো দেখতে,
চাইনি তুলে রাখতে কখনও নিজের কাছে।
ওলি বড় হল, এখন শুধু দেখতে ভালো লাগা নয়
জানাতে হবে ফুলকে, তোমার গন্ধ নিতে চাই।

ওলির চলার পথে অসে নানান ফুল
কারো চোখ, কারো ঠোঁঠ কারো বা ভালো লাগে চুল;
ফুলকে শুধু জানিয়ে শেষ নয়
যেকোন ভাবে তাকে কাছে পেতে চায়।

পেল কাছে ওলি তাকে,রয়ে যায় পাশে পাশে,
অসলে বন্দীদশায় ;ওলি বলে তবু ভালোবাসি তোমায়

তারপরেও কত ফুল, করে ইচ্ছা করি ভুল,
ওলি তবু থাকে নিশ্চল।
বন্দীদশায় ঘোরে ওলি, ঘরে যে আছে তারও কুড়ি
আশেপাশে নবওলি করে উড়াউড়ি।

স্বপ্ন ছিল একটা নদী কেনার

স্বপ্ন ছিল একটা নদী কেনার, শান্ত,শুভ্র বহমান একটা নদী,

যে নদীর কোল ঘেষে সাদা সাদা নিস্পাপ কাশফুল ফুটে থাকে,

বাতাসের দোলায় আর স্রোতের কুল কুল শব্দে

আন্তরে উঠে রোমাঞ্চের মাতম,

সাদা বক উড়ে যায় দল বেধে বহুদুর,

এমন একটা নদী।

স্বপ্ন দেখতাম, একান্তই আমার একটা নদী থাকবে,

নদীর তীরে বসে বসে তোমার চুল ওড়া দেখব,

দেখব দুষ্টু বাতাস তোমার সৌন্দর্যে কেমন হিংসায় জ্বলে পুড়ে

এলোমেলো করে দিয়ে যায় তোমাকে।

তোমার চুড়ির শব্দের কাছে কিভাবে ম্লান হয়

শত বছর ধরে বয়ে যাওয়া ঐ স্রোতের শব্দ।

তোমার কপালের টিপ দেখে কেমন করে

লজ্জায় মেঘের আড়ালে যায় প্রকিতির ঐ আপুর্ব স্রিষ্টি, মায়াবী চাদ।

সারাদিন ধরে তোমার সৌন্দর্যের সাথে পাল্লা দিয়ে

প্রকিতি যখন ব্যার্থ হয়ে ঘুমুতে যায়,

তখন না, নিলা জানো, আমার বুক গর্বে ভরে যায়,

নিজেকে খুব খুব আহংকারী মনে হয়,

বাচতে ইচ্ছা করে আনন্তকাল।

কিন্তু হঠাত মনে ভয় জাগে,

আমি কী পারব তোমাকে তোমার চেয়েও বেশি ভালবাসতে।

সারাদিন নদীর ধারে কাশফুলের ছায়ায় বসে

কাশফূল আর সাদা বকদের সাথে

তোমাকে ভালোবাসার পাল্লা দেয়।

ভালোবাসা শিখি তোমার চোখে আমার জন্য জমানো ভালোবাসার

গভীরতার কাছ থেকে, আর মুগ্ধ হয়,

এত সৌন্দর্য, এত গুন নিয়েও একটা মানুষ কতটা উদার

হতে পারে ! কতটা নিস্পাপ হতে পারে!

নিলা তোমার মনে আছে, একবার আমার সে কি মাথা ব্যাথা !

তারপর, তোমার কোলে মাথা রেখে তুমি আমার চুলে বিলি কাটতেই,

কোথায় পালাল মাথা ব্যাথা।

কি আছে তোমার ঐ নিস্পাপ স্পর্শে, তোমার ঐ শুভ্র ভালবাসায়!

স্বপ্ন ছিল, নদীটা কেনার পর, তোমায় নিয়ে হারিয়ে যাব নৌকা নিয়ে,

আমার ভালবাসার তরী ভেড়াব

কোন এক নির্জন চরে, যেখানে শুধু তুমি আর আমি,

সারাদিন শুধু ভালবাসাবাসি, আর স্বপ্ন দেখা।

কিন্তু স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে গেল আমার, সময় আর পেলাম কই বল।

যখন নদী পেয়েছিলাম, টাকার আভাবে কিনতে পারি না,

এখন আমার আনেক টাকা, কিন্তু নদী কেনার সময় পায় না।

আমার প্রয়োজনে আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম, তোমাকে ভালবেসেছিলাম,

জীবনের প্রয়োজনে এখন আমি আনেক ব্যাস্ত, ক্লান্ত, বিদ্ধস্ত।

তারপর ও বেচে আছি,

কারণ এখনও, এত আত্রিপ্ততার মাঝেও

তুমি আমাকে আগের মতই ভালবাস।